
চট্টগ্রাম : ১২৭ বছরের পুরনো চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন এসে বিরল ‘গৌতম বুদ্ধের কেশধাতু’ দেখে অভিভূত হয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট।
নগরীর নন্দন কাননে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনের সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের ভালোবাসা আর বিহারে আগত মানুষের প্রতি রাষ্ট্রপতির আন্তরিকতায় কারণে রাষ্ট্রপতির অবস্থানকালীন মাত্র ২৫ মিনিটের সময়টুকু স্মরণীয় হয়ে থাকবে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে। কেননা পৃথিবীর একমাত্র বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের কেশধাতু দেখে অভিভূত হয়েছেন বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাদের জানিয়ে গেছেন রাষ্ট্রপতি নিজেই। এছাড়া অতিথিপরায়ণ চট্টগ্রামের বৌদ্ধ নেতারা রাষ্ট্রপতিকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন কাশ্মিরী শাল, থাইল্যান্ড থেকে আনা ১২ ইঞ্চি উচ্চতার একটি সোনালী রংয়ের গৌতম বুদ্ধের মূর্তি আর একটি ক্রেস্ট।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে, বিশেষ করে গৌতম বুদ্ধের পাঁচ হাজার বছর পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের যে নতুন ধর্মপ্রচারক এসে যে গাছটির নীচে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকবেন সেই নাগেশ্বর গাছের চারাটিও রোপণ করে গেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টা ২৫ মিনেটে রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর হালিশহর থেকে এসে বৌদ্ধ মন্দিরে এসে পৌঁছে। মাত্র ২৫ মিনিট সেখানে অবস্থান করে ৩টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি হোটেল রেডিসন ব্ল’র উদ্দেশ্যে বৌদ্ধবিহার ত্যাগ করেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের বিহার দর্শনেই রাষ্ট্রপতি অভিভূত হয়েছেন বলে বাংলামেইলকে জানিয়েছেন বৌদ্ধ সমিতি চট্টগ্রামের সহ সভাপতি নৃপতি রঞ্জন বড়ুয়া।
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি বিহারে এসে পৌঁছলে বিহারের অধ্যক্ষ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথেরো তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতিকে নির্ধারিত মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মঞ্চে রাষ্ট্রপতিকে বৌদ্ধ বিহারের নেতারা বিরল গৌতম বুদ্ধের কেশধাতু দেখান। যেটি সাধারণত প্রতিবছর বৌদ্ধ পূর্নিমার সময় একবার উন্মুক্ত করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতির সম্মানে আজকে এটি ক্ষণিকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
এরপর পরই রাষ্ট্রপতিকে কাশ্মিরী শালের মাধ্যমে উত্তরীয় পরিয়ে দেন বিহারের অধ্যক্ষ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো। বিহার পরিচালানা কমিটির পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয় থাইল্যান্ড থেকে আনা ১২ ইঞ্চি উচ্চতার একটি সোনালী রংয়ের বুদ্ধমূর্তি। এসময় তাকে একটি ক্রেস্টও উপহার দেওয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের নিয়ে বিহার পরিদর্শন করেন। বৌদ্ধ মন্দিরের ভেতরে বোধিবৃক্ষের পাশে রাষ্ট্রপতি একটি নাগেশ্বর গাছের চারা রোপণ করেন। যেটির নীচে বসে গৌতম বুদ্ধের পাঁচ হাজার বছর পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নতুন ধর্মপ্রচারক এসে ধ্যানে মগ্ন থাকবেন।
বৌদ্ধ সমিতি চট্টগ্রামের সহ সভাপতি নৃপতি রঞ্জন বড়ুয়া বাংলামেইলকে বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাত্র ২৫ মিনিট বিহারে অবস্থান করেন। কিন্তু তার আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের কারণে এটি আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিহার পরিদর্শনের সময় রাষ্ট্রপতিকে পৃথিবীতে একমাত্র আমাদের বিহারে সংরক্ষিত গৌতম বুদ্ধের শেতকেশ দেখানো হয়। যেটি দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। এছাড়া বুদ্ধমূর্তিসহ শাল ও ক্রেস উপহার দেওয়ায়ও রাষ্ট্রপতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
নৃপতি রঞ্জন বড়ুয়া আরো বলেন, ‘গত ২০১২ সালে প্রধামন্ত্রী প্রাচনীতম এই বৌদ্ধ বিহারের পুননির্মাণ ও সংস্কার কাজের ভিত্তি প্রস্তর করলেও এতে সরকারি কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবগত করে ১২ তলা বিশিষ্ট বিহার নির্মাণে তার সহযোগিতা কামনা করা হয়। এ বিষয়টি তিনি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
এরআগে মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে বঙ্গভবন থেকে হালিশহর আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলের মাঠে অবতরণ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। সেখানে রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির পঞ্চম পুর্নমিলনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি। এসময় রাষ্ট্রপতির সাথে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, চট্টগ্রামের জিওসি সফিকুর রহমান প্রমুখ।
বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শনের সময় রাষ্ট্রপতির সাথে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হক চৌধুরী বাবুল, বৌদ্ধ সমিতির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অজিত রঞ্জন বড়ুয়া, সহ সভাপতি ইউএসটিসি’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা.প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া এবং সহ সভাপতি নৃপতি রঞ্জন বড়ুয়াসহ সংগঠনের নেতারা।
পাঠকের মতামত